যত দিন যাচ্ছে দেশে ততই বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর স্রোত যেন থামছেই না। গত ১৫ দিনের বেশি সময়ে রোগীতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। হাসপাতালটিতে শয্যা খালি না থাকায় বাড়তি দুটি তাঁবু টানিয়ে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। আরও একটি নতুন তাঁবু বানানোর কাজ শেষ পর্যায়ে।
রোগী ও স্বজনদের ভাষ্যমতে, তীব্র গরম, নোংরা পরিবেশ আর ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত পানির জন্য তারা আক্রান্ত হয়েছে এ রোগে। হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলছেন, আগের বছরগুলোয় তাদের হাসপাতালে গরমের মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী ভর্তি হতেন। কিন্তু এবার রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। এভাবে চলতে থাকলে চিকিৎসা পরিধি বাড়াতে হাসপাতাল অবকঠামো সংকুলান চ্যালেঞ্জ হবে। এ কারণে রোগটির প্রকোপ মোকাবিলায় এখনই ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। কেউ আক্রান্ত হলে করণীয় সম্পর্কিত স্বাস্থ্য শিক্ষা দিতে হবে।
রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) জানায়, গত ১৬ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত অর্থাৎ ১৭ দিনে ভর্তি হয়েছে মোট ১৯ হাজার ৮৬৯ জন রোগী। সেই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে এক হাজার একশর বেশি ডায়রিয়া রোগী। আর শুক্রবার প্রতি ঘণ্টায় এই হাসপাতালে ভর্তি হয় ৫২ জনের বেশি রোগী। এর মধ্যে গত ৪ দিন ধরে এ রোগীর সংখ্যা ছাড়াচ্ছে ১ হাজার ৩০০ জন। হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রোগীর চাপ বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
আর হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, রাজধানীর ডায়রিয়া পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। ভর্তি হওয়া রোগীদের ৩০ শতাংশ তীব্র ডায়রিয়া বা কলেরায় আক্রান্ত। আক্রান্তদের ৮০ ভাগই বয়স্ক। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ তীব্র পানিশূন্যতাসহ খুব ক্রিটিক্যাল বা গুরুতর অবস্থায় ভর্তি হচ্ছে। তারা বলছেন, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ার পেছনে অনিরাপদ পানিই মূলত দায়ী। তাই ডায়রিয়ার প্রকোপ থেকে বাঁচতে নিরাপদ পানি পান করাসহ তিনটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আইসিডিডিআরবির চিকিৎসকরা জানান, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, মিরপুরের শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর, উত্তরা এবং গাজীপুরের টঙ্গী থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে। এ ছাড়াও নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জসহ অন্য জেলা থেকেও রোগীরা আসছে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেন, গরমকালে ক্ষুধা-তৃষ্ণা মেটাতে বিভিন্ন সময় অনিরাপদ পানি পান ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছেন। এতে ফুড পয়োজনিং থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানিতে থাকা এন্টেরো টক্সিক ই-কোলাই, সালমোনেলা, সিজেলা ও কলেরার মতো ব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে ডায়রিয়া, কলেরা, রোটাভাইরাস, সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পরিস্থিতি তীব্র হওয়ায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ছুটে আসছেন।
আইসিডিডিআর,বি হাসপাতাল শাখার প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, ডায়রিয়া থেকে তাৎক্ষণিক আরোগ্য লাভ হয় না। তবে নিয়ম মেনে খাবার স্যালাইন আর পথ্য খেলে ধীরে ধীরে ভালো হয়। ডায়রিয়া হলে এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে। বড়দের (১০ বছরের বেশি বয়সি) ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পায়খানার পর ১ গ্লাস (২৫০ মিলি.) খাবার স্যালাইন খাবে। শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতিবার পায়খানার পর শিশুর যত কেজি ওজন, তত চা-চামচ বা যতটুকু পায়খানা হয়েছে আনুমানিক সেই পরিমাণ খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। শিশু বমি করলে ধীরে ধীরে খাওয়াতে হবে। এক্ষত্রে ৩ বা ৪ মিনিট পর পর ১ চা-চামচ করে খাওয়াতে হবে। স্যালাইনের পাশাপাশি ২ বছরের নিচের শিশু অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাবে এবং শিশুকে কোনো অবস্থাতেই বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না।